নতুন করে - আমার ভালবাসার গল্প

গাড়িতে উঠে ঠাস করে দরজাটা আটকে দিয়েই চিলের মত চিৎকার শুরু করলাম, "কেন তুমি সবার সামনে আমাকে এইরকম বললা? এইরকম অপমান আমি জীবনেও হই নাই... ছি ছি ছি, তুমি কথা বলার আগে কখনো চিন্তা কর না, তাই না? আমার য়ার ভালো লাগতেসে না, আমাকে হোস্টেলে নামায় দাও প্লীজ।" বলেই মুখ ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলাম। ড্রাইভিং সীট থেকে কাকুতি মিনতি শুরু হয়ে গেছে ততক্ষনে। কিন্তু আমার যেই রাগ, যেই জেদ- সেও জানে সহজে ঠান্ডা হব না।

চার দিন ধরে কথা বন্ধ। খুব ভাল হইসে, শয়তানটা বুঝুক ঠেলা। হুহ! আমার সাথে মামদোবাজি!!!! খুব ভাল হইসে, এখন বুঝুক আমি না থাকলে কেমন লাগে!! কিন্তু আমার তো আর ভাল লাগতেসে না। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কথা না বলতে পেরে। এই কয়দিনে কত গল্প জমে গেছে... ধুর! কেন শুধু শুধু এতো রাগতে গেলাম। বেচারাকে কষ্ট দিলাম চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে। ভাল লাগতেসে না, কেন আমি এইরকম??? উফ! ফোনও তো দেয় না বেয়াদবটা! খুব মজায় আছে মনে হয়!!!! সামনে এত স্পেশাল একটা দিন......

৫ দিন পর... যাক বাবা, শেষ পর্যন্ত ফোন দিসে।

"হ্যা কি বল।"
"রাগ কমসে?"
"কি বলবা বল। আমি খুব ব্যস্ত।"
"আচ্ছা আমি স্যরি তো বাবু। আর রাগ করে থাইক না, বাসায় আসো।"
"এতোদিন পরে কেন ফোন করসো??? খুব তো মজায় ছিলা মনে হয়!!!! আমি আসতে পারব না, আমার প্রজেক্ট জমা দিতে হবে।"
"আচ্ছা প্রজেক্ট জমা দিও, কিন্তু আপাতত আমাদের বাসা তোমার পথ চেয়ে বসে আছে, সেই সাথে আমিও। আসো প্লীজ, আর রাগ করে থাইকো না। কি হয় রাগ করে?"
"দেখা যাক। যদি পারি আসব। তুমি কি আসবা আজকে?"
"না বাবু এই পুরা সপ্তাহ আমার কাজের চাপ খুব বেশি, ডিউটি পরসে, আসতে পারব না।"
"তাইলে আমি কেমনে আসব? তুমি জানো না আমার একলা আসতে ভাল লাগে না?"
"একটু কষ্ট করে চলে আসো। এই লাস্ট, আর একলা আসা লাগবে না, I promise!"
"আচ্ছা দেখি।"

বৃহস্পতিবার। আমার বাসায় যাওয়ার দিন। আমাকে নিতে আসতে পারে নি। হুহ! বাসায় ঢুকেই এই নিয়ে এমন একটা খোঁচা দিব না!!!!!!

একসাথে অনেকগুলো বেল দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আবারো ঝগড়া করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি ততক্ষনে। কিন্তু বিধি বাম! শয়তানটা দরজা খুলেই আমার হৃদযন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়া ওর বিখ্যাত হাসিটা দিল, যে হাসি দেখলে আমার মাথা ঝিমঝিম করে, হাত পা অবশ হয়ে যায়, বুকে সুখের মত ব্যথা বাজে! কিসের কি খোঁচা আর কিসের কি ঝগড়া?? আমি দরজা থেকেই ওর বুকে ঝাপিয়ে পরলাম, সেই সাথে শুরু হইল আমার বিখ্যাত কান্না!

"এইরকম ক্যান তুমি??? কি মজা লাগে তোমার আমার চোখে পানি এনে???" শয়তানটা হাসতেই থাকল......

লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি। মা বাবা কিংবা সমাজ, কেউই আমাদের বিয়েটা মেনে নিত না, কিন্তু আমিও আমার ভালবাসার অধিকার ছেড়ে দিতে পারছিলাম না। আমার ১৩বছরের ভালোবাসা...... জানি অনেকের চোখে হয়তো এটা গুরুতর অপরাধ, কিন্তু আমি আমার ভালবাসার হাত কখনই ছাড়তে পারতাম না, উপরে বসে যিনি সব দেখেন উনি আমাকে এত সাহস দেন নি।

চাকরির কারনে আমার শয়তান মানুষটা একটুখানি দূরে থাকে। আর আমি পড়াশুনার খাতিরে শহরে, হোস্টেলে। একমাত্র সাপ্তাহিক ছুটিতেই বাসায় যাওয়া হয়, আমার আর আমার মানুষটার ছোট্ট বাসা। একটাই রুম, সাথে এক ফালি একটা বারান্দা, যে বারান্দায় ভালবাসায় মাখামাখি হয়ে আমরা দুই চাঁদ পাগল মানুষ হা করে পূর্ণিমা দেখি।আর আজকের চাঁদটা তো আরো সুন্দর লাগবে, না হোক পূর্ণিমা! Kurigram Blog

১৩ বছর পূর্ণ হল আজ আমার ভালবাসার গল্পের। অপেক্ষা করে ছিলাম এই জীবনটার জন্যই, আমার ভালবাসার মানুষ যেখানে অসীম মায়ায় আমাকে ডুবিয়ে রাখে, আমার রাগ, জেদ, অন্যায় আবদার সব মেনে নিয়ে গভীর মমতায় আমাকে বুকে টেনে নেয়। অনেক অপূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও সব পূর্ণ করে দেয় আমার এই মানুষ...

কথায় কথায় হয়তো কখনই বলি না "আমি তোমাকে ভালবাসি", কিন্তু যতক্ষন তোমার সামনে থাকি ততক্ষন আমার মাথায় একটা কথাই ঘুরতে থাকে ভাঙ্গা রেকর্ডের মত, "আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি তোমাকে ভালবাসি".........

অপেক্ষা করতে আসলেও দোষ নেই!

- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

Comments

Popular posts from this blog

About Mimi Chakraborty